ডেস্ক রিপোর্ট : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি আগামীকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন। বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।
আজহারের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত আজহারের রিভিউ আবেদন গ্রহণ করে মূল আপিল শুনানির অনুমতি দেন। এই সিদ্ধান্ত ছিল নজিরবিহীন, কারণ এটিই প্রথম মামলায় যেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের পর পূর্ণাঙ্গ আপিল শুনানির অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তাকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর অঞ্চলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী করা হয়।
আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল— ১২৫৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও গণহত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজন নারীকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক রেখে নির্যাতন ও গুরুতর জখম, এবং শত শত ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। এই ছয় অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পাঁচটি প্রমাণিত বলে রায় দেয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। পরে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আজহারের পক্ষে তার আইনজীবীরা ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরে আপিল করেন। ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিলের সঙ্গে ২ হাজার ৩৪০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়।
এই মামলায় রিভিউ আবেদন প্রথম দিন শুনানি হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। এর আগে, ২৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছিল। শুনানি পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি করা হলেও সেদিন শুনানি হয়নি। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) নতুন দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। শুনানির সময় চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির, এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত থাকবেন।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর আপিল বিভাগ আজহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। তখন আপিল বিভাগে নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এই রায়ের পর আজহার রিভিউ আবেদন করেন এবং এখন সেটিরই পরবর্তী শুনানি হতে যাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী এই রায়কে ‘প্রহসনের রায়’ আখ্যায়িত করে বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছে। দলটির দাবি, এটিএম আজহারুল ইসলাম নির্দোষ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, যুদ্ধাপরাধের নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।