শ্যামনগর : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার উপকূলের জনজীবন। ক্রমাগত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, লবণাক্ততার প্রসার এবং জলাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে এ অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু ফসল আবাদ করছেন কৃষক। এ তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে বারি-৪ জাতের লাউ। হেক্টরপ্রতি এ জাতের ৫৫-৬০ টন পর্যন্ত উৎপাদন হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া বারি-৪ লাউ যেমন লবণসহিষ্ণু তেমনি দ্রুতবর্ধনশীল।
জেলার শ্যামনগর উপজেলার জাদবপুর গ্রামের কৃষক নাজমুল হুসাইন দুই বিঘা জমিতে বারি-৪ জাতের লাউ চাষ করেছেন। সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে লাউ ধরেছে গাছে। একেকটি লাউ গড়ে চার-পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজন। ৬০ হাজার টাকার লাউ বিক্রিও করেছেন। এখনো গাছে যে পরিমাণ লাউ রয়েছে, আরো অন্তত ৮০-৯০ হাজার টাকা বিক্রি হতে পারে বলে জানান তিনি।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা গ্রামের কৃষক মো. জাকির হোসেন জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ঘেরের বাঁধে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি বারি-৪ জাতের লাউ চাষ করেছেন। মাত্র তিন মাসে মধ্যে প্রতিটি গাছেই লাউ ধরেছে। ব্যাপারীরা তার কাছ থেকে লাউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। লাউ চাষে খরচ অনেক কম। বীজ বপন করার পর চারা গজালে মাঝে মধ্যে সেচ ও কিছু জৈব সার প্রয়োগ করলেই হয়। প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তার।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমে জেলায় প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়, যা স্থানীয় মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করো হয়। বারি-৪ জাতের লাউ চাষে সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সাতক্ষীরা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শিমুল ম-ল জানান, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার মাটি বারি-৪ জাতের চাষের জন্য উপযোগী। এটি যেমন লবণ সহ্য করতে পারে, তেমনি ফলনও বেশি হয়। একেকটি লাউ ছয়-সাত কেজি পর্যন্ত হয়, যা হেক্টরপ্রতি ৫৫-৬০ টন উৎপাদন হয়। অন্য যেকোনো সবজির তুলনায় এটি বেশ লাভজনক। সাতক্ষীরা অঞ্চলে মাছের ঘেরের বাঁধে ও বসতবাড়ির আঙিনায় এটি চাষ করা যায়। কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রদর্শনী মাঠে প্রায় দুই বিঘা জমিতে এ জাতের লাউ চাষ করা হয়েছে, যার পুরোটাই বীজ তৈরি করা হবে।