মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুরে ছোট স্ত্রী স্বরুপ জাহান সাথিকে জবাই করে হত্যার পর বড় স্ত্রী সন্তানসহ স্বামী আবদুর রশিদ মিন্টু পালিয়ে গেছে। নৃশংসতম এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে রোববার গভীর রাতে উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামে স্বামীর রাইস মিলের একটি কক্ষে। সোমবার সকালে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। নৃশংসতম এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা দুপুরে মিন্টুর বাড়ি ও রাইস মিলে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। তবে ঘাতকসহ কাউকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। নিহতের স্বজন ও পুলিশের দাবি ছোট স্ত্রীর পিতার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে দ্বিতীয় দফায় টাকা এনে না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাথীকে হত্যা করে স্বামী মিন্টু।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত জাহাতাপ মুন্সির ছেলে আবদুর রশিদ মিন্টু ছিল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা। ইতিপূর্বে অস্ত্র ও মাদকসহ র্যাবের হাতে আটক হয়ে কয়েকমাস হাজত বাসের পর জামিনে মুক্ত হয়। পরে সে এলাকায় আবারও সন্ত্রাসী ও মাদকের কারবার শুরু করে। খাটুয়াডাঙ্গা বাজারের পাশে মিন্টুর রয়েছে একটি রাইসমিল ও চাতাল। চাতালের পাশেই তার পাকা বাড়ি। এ বাড়িতেই দুই সন্তানসহ বড় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতো মিন্টু। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তিন বছর আগে তার চাতালের শ্রমিক স্বরুপ জাহান সাথীর সাথে মিন্টু পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সাথীকে মিন্টু বিয়ে করেন। সাথী কাজিয়াড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম বক্সের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে। বিয়ের পর ছোট স্ত্রী সাথীকে নিয়ে চাতালের একটি কক্ষে বসবাস করতো মিন্টু।
সাথীর মা ভানু বিবি জানান, গতবছর সাথী পিতার বাড়ির জমি বিক্রি করে চারলাখ টাকা দেয় মিন্টুকে। গতমাসে আবারও মিন্টু সাথীকে চাপ দেয় পিতার বাড়ির বাকি জমি(সাথীর অংশ) বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সাথী দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়েই মূলত: সাথীর সাথে মিন্টুর বিরোধ দেখা দেয়। রোববার রাতে খাবার শেষে মিন্টু এবং সাথী চাতালের ঘরে ঘুমাতে যায়। গভীর রাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিন্টু ঘুমন্ত অবস্থায় সাথীকে জবাই করে হত্যা করে। ওই রাতেই বড় স্ত্রী, ছেলে রিফাত ও মেয়েকে নিয়ে মিন্টু বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সোমবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাথীর মৃতদেহ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নৃশংসতম এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা মিন্টুর বাড়ি ও রাইস মিলে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। সহকারি পুলিশ সুপার(মনিরামপুর সার্কেল) ইমদাদুল হক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গাজী, যশোরের ডিবি ও পিবিআই পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মাঠে নেমেছেন হত্যার ক্লু উদঘাটন ও হত্যাকারীকে আটকের জন্য। ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী জানান, মিন্টু ছিল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধীক মামলা রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় সাথী হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল।