ডেস্ক রিপোর্ট : কাশ্মীরের পাহাড়ঘেরা উপত্যকা পহেলগাম দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। ‘মিনি-সুইজারল্যান্ড’ খ্যাত এই এলাকা সম্প্রতি আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কারণ ভারত সরকার দাবি করেছিল, ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসী সহিংসতা কমে এসেছে। কিন্তু ২২ এপ্রিল সেখানে এক মর্মান্তিক হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় বলে জানা গেছে। এটি ২০১৯ সালের পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামে একটি গোষ্ঠী। তারা দাবি করেছে, অঞ্চলটিতে ৮৫ হাজার বহিরাগত বসতির প্রতিবাদে এই হামলা চালানো হয়েছে।
তবে ভারতের পুলিশ বলছে, ভারতীয় শাসনের বিরোধী সন্ত্রাসীরা এই হামলার পেছনে রয়েছে। ভারতের সাবেক সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে দৃঢ় ও দ্রুত জবাব চেয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিল। এর জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করেছিল। তখন ভারতীয় একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে বিধ্বস্ত হয় এবং পাইলটকে পরে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব
কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে ভারত সরকার যে দাবি করে আসছিল, এই হামলা সেটিকে বড় ধরনের ধাক্কা দিলো। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ভারতবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। এই সিদ্ধান্তের ফলে বহিরাগতরা এলাকায় জমি কেনা ও চাকরি পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে, পর্যটনও বেড়েছে; তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে।
সম্প্রতি এক ভাষণে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনীর কাশ্মীরকে ‘আমাদের শিরার ধমনীর সঙ্গে যুক্ত’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা কাশ্মীরের কথা ভুলবো না এবং আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবো না।
ভারতের সাবেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেনদ্র মোদীর বিদেশ সফরের সময় এই হামলা চালানো হয়েছে আন্তর্জাতিক নজর কাড়ার জন্য এবং কাশ্মীরের পর্যটন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য। সেখানে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি বড় হিন্দু তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৪ সালের জুনে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাস পাহাড়ি গিরিখাতে পড়ে গেলে নয়জন নিহত হন। সেই ঘটনাও সন্ত্রাসী হামলার ফল বলে মনে করা হয়। সে সময় ভারত ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান চালায়। এবারের ঘটনার পর আরও কঠোর পদক্ষেপের জন্য জনমত তৈরি হচ্ছে।