যশোর প্রতিনিধি : যশোরের ভবদহ এলাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে এবার নতুন আশার আলো দেখছেন স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (আজ) সকালে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা একযোগে ভবদহ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শনকালে তারা চলমান প্রকল্পসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন এবং জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অবঃ)। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টায় নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করার পর, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভবদহের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন তারা। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন এবং দুর্ভোগে পড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানসমূহ পরিদর্শন ও মতামত গ্রহণ করা হয়। পরিদর্শন শেষে বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সুধীসমাজ ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টারা।
ভবদহ এলাকা অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর (যশোর) এবং ডুমুরিয়া ও ফুলতলা (খুলনা) উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। পলি পড়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় শতাধিক গ্রামের বাড়িঘর, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ও মাছের ঘের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত চার দশকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি তাদের। তাই তারা ‘টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম)’ চালু এবং আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন।
ভবদহ সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা এবং বামনেতা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন,“তিন উপদেষ্টার একসঙ্গে আগমন এবার আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রতিফলন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এর আগেও এসে কথা দিয়েছেন ভবদহের স্থায়ী সমাধানের। সেই ধারাবাহিকতায় আমডাঙ্গা খাল খননের টেন্ডার শুরু হয়েছে। আমাদের মূল দাবি ছিল সেচ পাম্প বন্ধ করে টিআরএম চালু করা। সেটিও এবার বাস্তবায়নের পথে।”
তিনি আরও বলেন,“বিগত সময়ে যারা প্রকল্পের নামে লুটপাট করেছে, তাদের বিচার চাই। উপদেষ্টাদের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।”
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, “উপদেষ্টাদের নির্দেশে ইতিমধ্যে কিছু পানিনিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে। এবার কৃষি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও এসেছেন। আমরা কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, কৃষিঋণ মওকুফ এবং দুর্নীতির বিচার চাইছি।”
উপদেষ্টাদের এমন সম্মিলিত পদক্ষেপে ভবদহবাসী এবার কার্যকর এবং টেকসই সমাধানের প্রত্যাশা করছে।