1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

শ্যামনগরের অনুষ্ঠিত হলঃশতবর্ষ গিরিধারী চড়কমেলা

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

শ্যামনগর : ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে নতুন সাজে রাঙিয়ে দিয়েছে বাংলা নববর্ষ। গ্রামীণ তথা আবহমান লোকায়ত সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ এই মেলা। মেলা উপলক্ষে কখনও ধর্মীয়, আবার কখনও ধর্ম নিরপেক্ষ। তবে উপলক্ষ যেমনই হোক, শেষ পর্যন্ত ধর্ম বর্ণ গোত্র আবালবৃদ্ধ বণিতা নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে মেলাঅঙ্গন। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের কোলঘেঁসা ৭নম্বর মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের জেলেখালি গ্রামের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় শতবর্ষ কাল পূর্বে চড়ক পূজা কেন্দ্র করে ছোট্ট একটি পরিচয়ের একটি মেলা হতো, শেষ পর্যন্ত গিরিধারী চড়ক মেলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। দিগি¦দিক বিভিন্ন সময়ের পালা বদলে বাংলা নববর্ষ ও দক্ষিণবাংলায় গিরিধারী চড়ক মেলায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বয়ে চলেছে দীর্ঘকাল। চৈত্র সংক্রান্তের শেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গিরিধারী চড়ক মেলা। দক্ষিণবাংলায় শ্যামনগরে গিরিধারী সড়ক মেলা ইতিহাস খ্যাত। এছাড়া শ্যামনগরে উপজেলায় আটটি স্থানে চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।উনিশ শ’ সালের শুরুতে সুন্দরবনের তীরবর্তী ভূমিপুত্রদের হাতে আবাদ হওয়া একটা নতুন জনপদ যেখানে প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজিত হওয়াটাই চ্যালেঞ্জ সেখানে মেলা আয়োজন করা সত্যিকারের দুঃসাহসী পদক্ষেপ। এই পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম হিসেবে একটা হৃদয়বৃত্তিক দায়ের অনুভাবনা থেকে একটি লোকসংস্কৃতির অংশ হিসেবে তথ্য অনুসন্ধানের কাজটা শুরু করা হয়েছে। একটি তথ্য বিবরণীতে তার উত্তরসূরী দেবপ্রসাদ মন্ডল জানান ২০১৩ সালে নরেন্দ্রনাথ ম-লের মৃত্যুর বছর পুরনো ফাইল সেখানে মেলার শুরু থেকে সকল লাইসেন্সের হার্ডকপি আছে। এই জরাজীর্ণ ফাইল ছাড়া এই শতবর্ষে এসে পুরো ইতিহাস আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সম্পূর্ণ অধরাই থাকত। হয়তো টিকে থাকত মুখে মুখে ফেরা কিছু লোককথা যার ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বললেই চলে।আবাদ অঞ্চলে গিরিধরের চড়কমেলা মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। এই মেলার ব্যাপ্তি শুধু ছোট্ট একটা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না, ছড়িয়ে পড়েছিল দূর-দূরান্তে। তৎকালীন জেলা শহর সাতক্ষীরা থেকে এসে বসতো ভাতের হোটেল। কালীগঞ্জ থেকে আসতো কাপড় ও মনোহরী দোকান। ঢাকা থেকে আসত নিরঞ্জনবাবুর আমতলীর সার্কাস। আজকের আকাশসংস্কৃতি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সময়ে খুব সাধারণ ব্যাপার মনে হলেও তৎকালীন ভূমি সংস্কৃতির যুগে মাটির রাস্তা, দাঁড়টানা নৌকা আর গরুর গাড়িতে এমন প্রত্যন্ত এলাকায় মেলায় আসা-যাওয়া বলতে গেলে অসম্ভব ব্যাপার ছিল।শিব পৌরাণিক দেবতা হলেও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের কাছে লৌকিক দেবতা হয়ে উঠেছিলেন। কৃষিকাজের সাথে শিবের একটা অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে। এজন্য কৃষিপ্রধান পরিবারে শিবকে বড়ো ভক্তি করে, মনে করে নিজের ঘরের মানুষ। তেমনি একটা ভক্তির জায়গা থেকে কৃষিভিত্তিক পরিবার স্বর্গীয় গিরিধর ম-ল বাড়িতে শিবপূজা শুরু করেছিলেন।… কিন্তু পরবর্তীতে পূজাকে কেন্দ্র করে এতবড়ো মেলার আয়োজন হবে এটা গিরিধর ম-লও বুঝতে পারেননি। অবশ্য তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং বিস্তর অর্থ ব্যয়ে মেলা শুরু হয়েছিল। গিরিধর ম-ল তাঁর জীবদ্দশায় ৩বছর মেলার লাইসেন্স পেয়েছিলেন, ভ্রাতুষ্পুত্র ঈশানচন্দ্র ম-ল অনুমতি পেয়েছিলেন ১৯ বছর, এরপর স্বর্গীয় নরেন্দ্রনাথ ম-ল মেলার অনুমতি পেয়েছিলেন ১২বছর। ১৯২৫সাল থেকে পূজা শুরু হয়ে ২০০০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৪বার সরকারের অনুমতি নিয়ে বড়ো করে মেলার আয়োজন হয়েছে। ২০০০ সালের পরে আর মেলা হয়নি। তবে প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির দিন বড়ো করে মেলা বসে। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয় মেলাপ্রাঙ্গণ।২০২৫ সালে অর্থাৎ ১৪৩২ বঙ্গাব্দে চৈত্রমাসে চড়কপূজার শতবর্ষ পূর্ণ হলো। সেই উপলক্ষ্যে অতীতের সোনালি দিনগুলোকে তুলে ধরার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। সাথে গিরিধারে চড়ক মেলা পূজা উদযাপন কমিটির জন্মের লেখক শিক্ষক এবং গবেষক দেবপ্রসাদ মন্ডল ও নব কুমার মন্ডল তাদের তথ্য অনুসন্ধানে প্রতিবেদনের কাজটি আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ।শিবপূজা বা চড়ক পূজার ইতিহাস ও চাষাবাদের সাথে শিব পৌরাণিক লৌকিক ইতিহাস অঙ্গঙ্গিকভাবে স্মৃতিচারক যেটি তুলে ধরা অত্যন্ত সময়োপযোগী। বাংলাদেশের বাঙালিদের অতি প্রাচীনতম লোক উৎসব চড়ক পূজা শিবের গাজন। শিবের গাজন শিব পূজার সঙ্গে কাল কোন মেয়ের সংশ্লিষ্ট রয়েছে ‘গাজন’ নামে বৎস্য শেষের উৎসবটি। গাজন ছিল প্রথমের ধর্ম ঠাকুরের উৎসব পরে শিবের সঙ্গে তা যুক্ত হয়েছে।এই সব ধর্মচার ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে ধর্মঠাকুর রাঢ়দেশে গ্রাম্য দেবতার রূপের রূপায়িত হয়েছেন। তার গ্রাম্য জন উৎসবের নাম হয়েছে গাজন। ক্রমে ক্রমে ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা এই গাজনকে শিব উৎসবে পরিণত করেছেন। শিবক্রমে প্রধান গ্রাম দেবতা গাজন সহজে শিবের গাজন নামে পরিণত লাভ করে। পন্ডিতেরা মনে করেন যে গাজন ও গাজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চড়ক উৎসব আদিম সমাজ থেকে এসেছে। সমাজিক জনতত্ত্বের দৃষ্টিতে ধর্ম ও চড়ক পূজা দুই আদিম কৌম সমাজের ভূতবাদ ও পুনজন্মবাদ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠাত; প্রত্যেক কৌমের মৃত ব্যক্তিদের পুনর্জন্মের কামনাতেই এই দুই পূজার বাৎসরিক অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে।গিরিধর ম-লের বাড়িতে চড়কপূজা শুরুর কাহিনি:বর্তমানে পূর্ব জেলেখালীর অংশটুকু মোটামুটি হাতে গোনা কয়েকজন সাহসী ভূমিপুত্রের হাতে ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ আবাদের কাজ শুরু হয়। এই জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় এই ভূমিপুত্ররা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে আবাদ করার মতো অসাধ্য সাধন করেছিলেন। দীননাথ ম-ল রমজাননগর মৌজা থেকে জেলেখালী আসেন। বসবাসের উপযোগী করার জন্য জঙ্গল কেটে আবাদের কাজ শুরু করেন। এজন্য তাদের সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে গাছের উপর টোঙঘর বানিয়ে রাতে থাকতে হতো। কারণ আজকের যে সাজানো জনপদ এই অবস্থা আগে মোটেই ছিল না। মাত্র বছর চল্লিশেক আগেও এখানে ছিল মাটির রাস্তা, শুধু বর্তমান সাতক্ষীরা-খুলনা হাইওয়ে ছিল ইটের। তার আগে কদমতলা থেকে সুরেন বাবুর বাড়ির পাশ দিয়ে একটা রাস্তা ছিল সোজা ঈশ্বরীপুর বরাবর। পাশে দিয়ে বয়ে চলছিল কদমতলী নদী। এই নদী পথেই লোকজনের যাতায়াত ছিল বেশি। তখন বাঘের ভয় তো ছিলই, সাথে সামনের খালে ছিল অসংখ্য কুমির। বিষধর সাপ, অসংখ্য ভয়াল বন্য জন্তু জানোয়ারের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সারাদিনে সর্বসাকুল্যে তিন-চারটা বড়ো গাছের বেশি কাটা সম্ভব হতো না। বড়োগাছ কেটে ফেলে রাখত আর ছোট গাছ কাটতো না, বড়োগাছ একটু শুকিয়ে গেলে আগুন জ্বালিয়ে দিত। এভাবে তিন-চার বছর ধরে অত্যন্ত পরিশ্রম, ধৈর্য এবং অসীম সাহসের সাথে করতে হয়েছে আবাদের কাজ। পূর্বেই বলেছি দীননাথ ম-ল রমজাননগর মৌজা থেকে এখানে এসেছিলেন। রমজাননগরের অধিবাসী মধু ম-লের চার ছেলে। দ্বীপচাঁদ ম-ল, গোপাল ম-ল, দীননাথ ম-ল ও গিরিধর ম-ল। এরমধ্যে দীননাথ ম-ল জেলেখালীতে এসেছিলেন আবাদের কাজে। একা বেশ কিছু ভূমি আবাদের পরে ছোটভাই গিরিধর ম-লকে নিয়ে আসেন। দু’জন মিলে করলে আবাদের কাজও দ্রুত হবে। তাছাড়া নৌকা ও গাছের টোঙের উপরেই যেহেতু খাওয়া-দাওয়া, বসবাস করতে হয় সেহেতু নৌকায় বসে একটু রান্না, গাছের উপরে ২/৩জন মিলে থাকলে সাহসও বাড়ে। এসব কারণে প্রথমে ছোটভাই গিরিধর ও পরে বালক পুত্র ঈশানকে নিয়ে আসে। কয়েক বছরের মধ্য তারা শতাধিক বিঘা জমিপত্তন করে সপরিবারে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন। কিন্তু দীননাথ ম-লের কপালে সুখ স্থায়ী হয়নি। ওই সময়ে কলেরার খুব প্রাদুর্ভাব ছিল। একবার এই রোগ দেখা দিলে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। আবাদের কিছুকাল পরেই কলেরায় দীননাথ ম-ল অকাল প্রয়াত হন। একমাত্র বালকপুত্র ঈশানচন্দ্র ম-লের দায়িত্ব পড়ল কাকা গিরিধর ম-লের উপর। গিরিধর ম-লের ছিল চারজন কন্যাসন্তান (যাদের অনেকের জন্ম অবশ্য আরো পরে)। নিজে অপুত্রক থাকায় ভ্রাতুষ্পুত্র ঈশানচন্দ্র ম-লকে নিজের সন্তানের মতোই বড় করেছিলেন।কষ্টার্জিত আবাদি সম্পত্তির বদৌলতে ভূমিপুত্র গিরিধর ম-লের পারিবারিক অয়ে তখন বেশ স্বচ্ছল। আবশ্যক ক্রিয়া-কর্মের পাশাপাশি কিছু অনুষ্ঠান আয়োজনেরও আকাঙ্ক্ষা জাগছে, সাথে ভক্তিভাবও ছিল। নতুন আবাদ অঞ্চলে পূজা বলতে কদমতলা ঠাকুরবাড়িতে চড়কপূজা (১৩১৩ বঙ্গাব্দ থেকে), প্রতিবেশী ঋষিবর মিস্ত্রীর বাড়িতে শীতলাপূজা (১৩১৫ বঙ্গাব্দ থেকে), আর মথুরাপুরের মানিকচাঁদের দোল। এছাড়া আর তেমন পূজাপার্বণ আশেপাশে ছিল না। এই সময়ে গিরিধর ম-ল ও জেলেপাড়ার রাইচরণের সাথে ঘটে এক অভিন্ন স্বপ্ন আদেশের ঘটনা। ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (ইংরেজি ১৯২৫) স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গিরিধর ম-ল পূজা করার সিদ্ধান্ত নেন।সেই অবধি কালের বিবর্তনে সময়ের অসময়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং সংস্কৃতির কিছুটা বিপর্যয় মনে হলোও এ বছর শতবর্ষ পুর্তি এলাকায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উৎসব উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। ১৯২৫ সালে চড়ক মেলা শুরু হয়েছিল, যেটি গিরিধারে চড়ক মেলা নামে পরিচিত আজ ২০২৫সাল শতবর্ষ পূর্তি হল। নতুন আঙ্গিকে নতুন সাজে আগামীকাল ১৪ এপ্রিল গিরিধারী চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৯দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গিরিধারী সড়ক মেলা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন মেলা প্রজন্মতীত কর্তৃপক্ষ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট