1. news@sangjogprotidin.online : ADMIN : ADMIN ADMIN
  2. info@www.sangjogprotidin.online : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
জরুরী সাংবাদিক নিয়োগ চলছে আপনার কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ! "সংযোগ প্রতিদিন" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে।

নববর্ষে উপকূলবাসীর দাবি টেকসই মজবুত জলবায়ু পরিবর্তন

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

শ্যামনগর প্রতিনিধি : মাল্টি-অ্যাক্টর পার্টনারশিপ (ম্যাপ) হলো এমন একটি কাঠামো যেখানে একটি সমন্বিত অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার তথা সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ভুক্তভূগি জনগোষ্ঠি, এনজিও এবং নাগরিক সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একসঙ্গে মিলে কাজ করে পরিবেশ রক্ষা, টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, সুশাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা।
যার মূল লক্ষ্য হলো- কোন একটি জনস্বার্থ সংস্লিষ্ট ইস্যুকে অংশগ্রহণমূলক বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় মাল্টি-অ্যাক্টর পার্টনারশিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যেখানে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা, ক্ষমতায়ন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থায় স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের পথ বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।
পাশাপাশি CDRFI এর পূর্ণরূপ হলো Climate and Disaster Risk Finance and Insurance, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য অর্থায়ন ও বীমা কাঠামোকে বোঝায়। এটি মূলত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। MAP-CDRFI কার্যক্রম হলো জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থায়ন ও বীমা সুবিধা সহজলভ্য করা, বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও সম্প্রদায়ের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করা, স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা, সরকারি-বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন। MAP CDRFI-এর মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনে সহায়তা করতে পারে, নারীদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বীমা সুবিধা দেয়া যেতে পারে, জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও জীবিকা উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন করা যেতে পারে এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে নারীদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।
এটি এমন একটি অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ, যেখানে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠি ও নাগরিক সমাজ একত্রে কাজ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কার্যকর অর্থায়ন ও বীমা কাঠামো তৈরি করে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো- জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা; ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বীমা ব্যবস্থা চালু করা; দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা; সরকার, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে সমন্বিত অর্থায়ন নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিকভাবে CDRFI একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর কাঠামো হিসেবে স্বীকৃত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়তে থাকা দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে বাস্তব সহায়তা দেয়। তবে এটি এখনো উন্নয়নের ধারায় রয়েছে এবং সর্বজনীন সফলতার জন্য আরও বিস্তৃত অংশগ্রহণ এবং সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। সঠিক পরিকল্পনা, অংশীদারিত্ব ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে MAP-CDRFI কাঠামো বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।
আন্তর্জাতিকভাবে CDRFI-এর সফলতা বিশ্লেষনে দেখা যায় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা বিশেষ করে আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে অনেক দেশ দুর্যোগ ঝুঁকির মুখোমুখি। সিডিআরএফআই উদ্যোগের মাধ্যমে এসব দেশ আর্থিক সহায়তা এবং বীমা কাভারেজ পায়, যা দুর্যোগের পর দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করে। CDRFI-এর ধারনায় জার্মানির ‘InsuResilience Global Partnership’-এর ভূমিকা অপরিশীম, উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এই অংশীদারিত্ব CDRFI-এর মূল চালিকাশক্তি।
২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে জলবায়ু ও দুর্যোগ বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, বিশ্বব্যাংক, UNDP সহ বিভিন্ন সংস্থা এতে যুক্ত। সিডিআরিএফআই ধারনায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ভাবে আঞ্চলিক ঝুঁকি পুল তৈরি হয়েছে যেমন- African Risk Capacity (ARC) – আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর জন্য। Caribbean Catastrophe Risk Insurance Facility (CCRIF)–ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের জন্য। Pacific Catastrophe Risk Assessment and Financing Initiative (PCRAFI) – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য।
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য অর্থায়ন ও বীমা একটি কাঠামো আছে। এই কাঠামোর উপাদান বলতে RTRFMকে বুঝায়, যার পূর্ণপুর হলো Risk Transfer, Reduction, Financing and Monitoring. ঝুঁকি স্থানান্তর (Risk Transfer) তথা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে বিভিন্ন বীমা ব্যবস্থা যেমন মাইক্রো-ইনস্যুরেন্স, ফসল বীমা, স্বাস্থ্য বীমা ইত্যাদিকে ঝুঁকি মোকাবিলার অন্তর্ভুক্ত করা।
ঝুঁকি হ্রাস (Risk Reduction) তথা জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরি এবং দুর্যোগ পূর্ববর্তী প্রস্তুতি নেয়া। ঝুঁকি অর্থায়ন (Risk Financing) দুর্যোগকালীন সময়ে জরুরি সহায়তা প্রদান করা এবং তহবিল গঠন করা। ঝুঁকি নিরীক্ষণ (Risk Monitoring) জলবায়ু ও দুর্যোগ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। CDRFI ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের আঙ্গিকে ম্যাপ-সিডিআরএফআই (MAP-CDRFI) এর অন্তরায় হিসেবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং রাজনৈতিক স্তরে একাধিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা যেমন- অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা তথা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বা প্রকল্পের কার্যকর বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রযুক্তিগত এবং অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা তথা উন্নত প্রযুক্তির অভাব এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা (যেমন, তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি) প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারি প্রশাসনিক জটিলতা এবং দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে।
সিডিআরএফআই (CDRFI) প্রকল্পের বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার অভাবও বড় একটি বাধা। সিডিআরএফআই কৌশলটির সফল বাস্তবায়নের জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা এবং সমর্থন জরুরি। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এই বিষয়ে জনসাধারণের সচেতনতা কম, যা প্রকল্পের সফলতা বিঘ্নিত করতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং কার্যকর বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, এবং এই কারণে সিডিআরএফআই কৌশলটি নীতিগতভাবে এমনভাবে তৈরি হওয়া উচিত, যা দেশটির জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে উপযুক্ত নীতিমালা এবং কার্যক্রমের অভাব রয়েছে। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, যা সিডিআরএফআই বা এর মতো অন্যান্য ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশে MAP-CDRFI একইসাথে একটি সম্ভাবনা এবং কিছু অন্তরায়ের সম্মিলন, তবে সামগ্রিকভাবে এটি একটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা বলে বিবেচিত। সম্ভাবনার দিক হলো-প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ হওয়ায় প্রয়োজনীয়তা বেশি। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা, খরা নিয়মিত ঘটনা। CDRFI কাঠামো এ ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি ও তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। দ্রুত পুনরুদ্ধারের সুযোগ পূর্বনির্ধারিত প্যারামেট্রিক বীমার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির সাথে সাথে অর্থ ছাড় করা সম্ভব।
দুর্যোগের পরে বিদেশি সাহায্যের জন্য অপেক্ষা না করে দেশের অভ্যন্তরেই সহায়তা শুরু করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে InsuResilience, World Bank ও GCF-এর সাথে সমন্বয় করছে। বিআইডিএস (BIDS) ও আইইডিএস (IEDS) এর মতো প্রতিষ্ঠান গবেষণায় যুক্ত হয়েছে। মাইক্রোইন্স্যুরেন্স সম্ভাবনায় ক্ষুদ্র কৃষক, দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য স্বল্প প্রিমিয়ায় জলবায়ু বীমা চালু করার একটি ভালো সুযোগ তৈরি হয়।
ডেটা ও পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন ঝুঁকি বিশ্লেষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিডিআরএফআই সঠিক ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। অন্তরায়ের দিক হলো – প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির ঘাটতি, এখনো বাংলাদেশের অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে এই কাঠামো সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সক্ষমতা তৈরি হয়নি। জনসচেতনতার অভাব তথা গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বা কৃষক মহলে “বীমা” বা “প্রিমিয়াম” ধারণা এখনো অস্বচ্ছ এবং সন্দেহজনকভাবে দেখা হয়।
অর্থায়নের অপ্রতুলতা ও টেকসই কাঠামোর অভাব দীর্ঘমেয়াদে বীমা প্রিমিয়াম কে বহন করবে? সরকার, দাতা সংস্থা না জনগণ? – এই প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার তালিকায় নিচে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোর মতো খাতে বরাদ্দ বেশি হওয়ায় জলবায়ু বীমা বা ঝুঁকি অর্থায়ন অনেক সময় প্রাধান্য পায় না। সঠিক পরিকল্পনা, অংশীদারিত্ব ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে MAP-CDRFI কাঠামো বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।
এটি একটি সম্ভাবনাময় ও টেকসই আর্থিক প্রতিরক্ষা কাঠামো, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতির একটি মাইলফলক হতে পারে। উদাহারণ হিসেবে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে খুলনা বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পরিশাল পটুয়াখালি, ভোলা জেলা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে দুর্যোগ-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অত্যন্ত কঠিন।
এই প্রেক্ষাপটে, কেয়ার বাংলাদেশ স্থানীয় জনগণের জন্য একটি প্যারামেট্রিক মাইক্রোইনশুরেন্স পাইলট প্রকল্প চালু করে। এই বীমা ব্যবস্থায়, নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে পূর্বনির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়, যা দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করে।
এর-ই মাঝে CARE Bangladesh ২০২২ সালে InsuResilience Global Partnership-এর সহায়তায় দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় জেলা হিসেবে ভোলাতে একটি প্যারামেট্রিক মাইক্রোইনশুরেন্স পাইলটিং করে যেখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং লবণাক্ততা কৃষি ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলো নামমাত্র প্রিমিয়ামে দুর্যোগকালীন আর্থিক সহায়তা পেতে শুরু করে।
যার মাসিক প্রিমিয়াম ছিলো ২৫ টাকা কাভারেজ ছিলো ঘূর্ণিঝড়/জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতি, ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার মাধ্যমে। ২০,০০০+ পরিবার বীমার আওতাভুক্ত করা হয়। দুর্যোগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পে-আউট (পরিবার প্রতি ২,৫০০–৫,০০০ টাকা) ৯০% এর বেশি পেমেন্ট bKash/Nagad এর মাধ্যমে, পরিবারগুলো দুর্যোগ-পরবর্তী দ্রুত খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিতে পেরেছে।
সহজ প্রিমিয়াম কাঠামো দরিদ্র মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য হয়েছে, ডিজিটাল বিতরণ স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করেছে, কমিউনিটি পর্যায়ে বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে। প্যারামেট্রিক মাইক্রোইনশুরেন্স হতে পারে উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য কার্যকর আর্থিক নিরাপত্তা বলয়।
সরকারী স্বীকৃতি ও নীতিমালা এটি টেকসই করতে পারে। উদাহারণ হিসেবে আরো উল্ল্যেখ করা যেতে পারে – Start Ready Risk Pool উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে অবস্থিত শ্যামনগর উপজেলা বার্ষিক জোয়ার-ভাটা, জলাবদ্ধতা এবং ঘূর্ণিঝড় জনিত ক্ষতি অত্যন্ত বেশি। Start Network-এর Start Ready প্রকল্পের অধীনে CARE Bangladesh ও Concern Worldwide ২০২৩ সালে Risk Pool Financing চালু করে।
এতে দুর্যোগ-পূর্ব অর্থ ছাড় হয় নির্দিষ্ট পূর্বাভাস মডেলের ভিত্তিতে। দুর্যোগ পূর্বাভাস Flood Forecasting & Early Action Protocol (EAP), ২০২৩ বন্যা মৌসুম উপকারভোগী ছিলো ১ লাখ মানুষ অর্থ বিতরণ প্রায় ২ কোটি টাকা (২৪ ঘণ্টার মধ্যে), বন্যার আগেই খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়, জরুরি শৌচাগার ও নিরাপদ আশ্রয় ব্যবস্থাপনা হয়, ক্ষয়ক্ষতির হার পূর্বের তুলনায় ৪০% হ্রাস পেয়েছে।
আগাম অর্থ ছাড় বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সফল হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও NGO সমন্বয় কার্যকরভাবে কাজ করেছে। পূর্বাভাস ভিত্তিক অর্থায়ন জনসাধারণের আস্থাও বাড়িয়েছে। Forecast-based Financing কেবল একটি জরুরি সহায়তা নয়, এটি একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল।
একইভাবে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা অঞ্চল বন্যাপ্রবণ, যেখানে প্রতি বছর নদীভাঙন ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। WFP, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও GIZ-এর সহায়তায় Forecast-based financing (FbF) প্রকল্প চালু হয় ২০২০ সালে, যেখানে বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া মাত্র পরিবারগুলোকে অর্থ পাঠানো হয়। পূর্বাভাস ভিত্তিক পেমেন্ট দেয়া হয় বন্যার ৩ দিন আগে, উপকারভোগীর সংখ্যা ২৫,০০০ পরিবার, পরিবার ভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৪,৫০০ টাকা করে, টাকার ব্যাজহার করে শুকনো খাবার, পশু বাঁচানো, নিরাপদ জায়গায় যাওয়া। অধিকাংশ পরিবার আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে পেরেছে
। দুর্গত এলাকায় মানবিক সংকট কমেছে। ক্ষয়ক্ষতির হার কমেছে ৩০% পর্যন্ত, ময়োপযোগী পূর্বাভাস ও অর্থায়ন সরাসরি জীবিকা রক্ষা করেছে। FbF কে সরকারী সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোতে একীভূত করা সম্ভব। স্থানীয় পর্যায়ে পূর্বাভাস-বোঝার সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
এই আলোচনা থেকে এটা প্রতিমান হয় যে, বাংলাদেশে MAP-CDRFI কাঠামো বাস্তবায়নে NGO-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলো ইতোমধ্যে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পেরেছে। তবে এই সফলতা জাতীয় পর্যায়ে টেকসই করতে প্রয়োজন জাতীয় CDRFI রোডম্যাপ। রোডম্যাপের উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের দুর্যোগ-প্রবণ অঞ্চলের জনগণের জন্য একটি টেকসই আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে তারা দুর্যোগের পূর্বে এবং পরে দ্রুত সহায়তা ও পুনর্বাসন পেতে পারে।
এটি একটি সমন্বিত কাঠামো হবে যা সরকারি- বেসরকারি খাতের এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বয়ে কার্যকর হবে। লক্ষ্য হবে দুর্যোগকালীন ক্ষতিপূরণ দ্রুত বিতরণ নিশ্চিত করা, প্রাক-দুর্যোগ অর্থায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
সমন্বয় এবং অংশীদারিত্ব দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এবং অংশীদার তথা সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারন। বেসরকারি খাত তথা বীমা কোম্পানি, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক অংশীদার: UNDP, WFP, CARE, স্থানীয় এনজিও: সহায়ক এবং বাস্তবায়নকারী হিসেবে কাজ করবে। ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির দুর্যোগে সুরক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম হিসেবে পূর্বাভাস ভিত্তিক এবং ও ঝুঁকি মূল্যায়ন তথা দুর্যোগের পূর্বে উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা (এনএফএস, ফ্লাড ফরকাস্ট সেন্টার) স্থাপন করে ঝুঁকি সনাক্তকরনে সচেষ্ট থাকবে।
দুর্যোগের পূর্বে এবং পরবর্তী অর্থ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য একটি ঝুঁকি পুল তৈরি থাকবে, যা সংযুক্ত করবে সরকারের তহবিল, বীমা কোম্পানি এবং বেসরকারি খাতকে। ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং দ্রুত হবে, এবং পেমেন্ট মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম (যেমন bKash, Rocket) এর মাধ্যমে সরাসরি বিতরণ করা হবে।
ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদি দুর্যোগের পূর্বাভাস অনুযায়ী প্যারামেট্রিক বীমা চালু থাকবে, যাতে ঝুঁকি ঘটলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরাসরি প্রদান করা যায়। বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা তথা বিভিন্ন বীমা কোম্পানি এবং ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঝুঁকি পরিশোধে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেব।
একটি মিশ্র অর্থায়ন কাঠামো গঠন করা, যেখানে সরকার, আন্তর্জাতিক অংশীদার, বেসরকারি খাত এবং জনগণের চাঁদা থাকবে। এতে একটি নির্দিষ্ট তহবিল গঠন করা হবে, যা দুর্গত এলাকায় দ্রুত সহায়তা প্রদান করবে। সামাজিক বীমা তথা দরিদ্র জনগণের জন্য সহজ এবং কম খরচে বীমা পলিসি চালু করা, যাতে তারা দুর্যোগকালীন সহায়তা পেতে পারে। সরকারী এবং বেসরকারি কর্মকর্তাদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং CDRFI বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা, যাতে তারা বীমা সুবিধা সম্পর্কে জানে এবং ব্যবহারের জন্য আগ্রহী হয়। সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামো গঠন তথা Microinsurance Policy এবং CDRFI Act গঠন করা, যাতে বীমা কোম্পানি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়মিতভাবে প্রিমিয়াম সংগ্রহ ও ক্ষতিপূরণ দিতে পারে। বাস্তবায়ন পর্যায় ও পরিকল্পনা তথা প্রথম ২ বছরব্যাপী পাইলট প্রকল্প পরিচালনা পরবর্তীতে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে এটি অন্যান্য জেলা ও অঞ্চলে সম্প্রসারণ করা।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (যেমন: মোবাইল অ্যাপ, USSD কোড) ব্যবহার করে জনসাধারনের মধ্যে সেবা পৌঁছানো এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় দ্রুততা আনা। সরকারের বাজেটের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তহবিল বরাদ্দ, এছাড়া আন্তর্জাতিক সহায়তা, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এবং জনগণের জমা। বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরি তহবিল গঠন করা, যা দুর্যোগের আগে ও পরে শীর্ষ স্থানীয় সাহায্যকারী সংস্থাগুলির মাধ্যমে কার্যকরী করা হবে।
রোডম্যাপের সময়সীমা প্রথম পরিকল্পনা এবং নীতিগত প্রস্তুতি ২০২৫ সালে, পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন ২০২৬–২০২৮, সম্পূর্ণ জাতীয় বাস্তবায়ন ২০২৮–২০৩০। এই CDRFI রোডম্যাপ বাস্তবায়ন বাংলাদেশে দুর্যোগের আর্থিক ঝুঁকি কমাতে এবং জনগণের দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। সরকার, বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের দুর্যোগ-ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য একটি কার্যকর এবং টেকসই আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সংযোগ প্রতিদিন
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট